kawsar

Sunday, October 07, 2012

সোশ্যাল গুড সামিটের বাংলাদেশ পর্ব অনুষ্ঠিত

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের তিন দিনব্যাপী 'সোশ্যাল গুড সামিট' নামের সম্মেলনটির সমাপনী পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত 'সোশ্যাল গুড সামিট' সম্মেলনটি শুরু হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচি (এটুআই)।
সোশ্যাল গুড সামিটের বাংলাদেশ পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকেই তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের মঙ্গল করতে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। বর্তমান সরকার দারিদ্র্য হ্রাস এবং গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যার সমাধানে নিউ মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপায় এবং প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি তা ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান প্রিজনার। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হতে হবে মানুষের মঙ্গলের জন্য, মানুষের কাছে পেঁৗছানোর জন্য। তিনি বলেন, সমাজের প্রান্তিক মানুষের কাছে পেঁৗছানোর জন্য ও তাদের অধিকার রক্ষায় প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।' উদাহরণ হিসেবে তিনি এটুআই কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত ই-পুর্জির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ই-পুর্জির মাধ্যমে চিনি পরিশোধনকারীরা কোনরকম মধ্যস্বত্বভোগীদের সহায়তা ছাড়াই আখ সংগ্রহের জন্য কৃষকদের সরাসরি এসএমএস পাঠাতে পারে এবং আখ সংগ্রহ করতে পারে।
'এটুআই' প্রকল্পের পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে এখন ৪ হাজার ৫৪৫টি উপজেলায় তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুবিধার আওতায় এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। নিউ মিডিয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফেসবুককে জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। যে দেশে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা। তিনি বলেন, জনসংখ্যার দিক থেকে চীন, ভারতের পরেই ফেসবুকের অবস্থান। বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলে তিনি তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক কবীর বিন আনোয়ার।
সম্মেলনটির ঢাকায় আয়োজিত বাংলাদেশ পর্বের অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক উন্নয়নের বাধাগুলো দূর করতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তা ও মত প্রকাশের পাশাপাশি সমাজের প্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা সম্পর্কে তাদের মতামত জানিয়েছেন।
সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করতে নতুন প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে সোশ্যাল গুড সামিটের ঢাকা পর্বের এ আয়োজনে সে প্রসঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মসহ তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিরা।
তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক সেবা, ই-গভর্নেন্স, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউ মিডিয়া নিয়ে যারা এদেশে কাজ করছেন তাদের প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধি এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজ, সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ ছাড়াও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকরা অংশ নেন। ঢাকার এ অধিবেশনে বাংলাদেশে অনলাইন ও নিউ মিডিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, সরকারি কাজ ও উন্নয়নে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যার সমাধানে নিউ মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপায় এবং এর মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাধাগুলো দূর করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে 'সোস্যাল গুড সামিট ২০১২' শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এরিকসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রেসিডেন্ট হান্স ভেস্টবার্গ এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামাদোন তোরে। এতে ব্রডব্যান্ডের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।
প্রযুক্তিবিষয়ক খবরের সাইট ম্যাশেবলের প্রধান সম্পাদক ল্যান্স উলানফ আলোচনায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আগের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ভেস্টবার্গ। তার ভাষায়, এখন বিশ্বে ৬৩ লাখ ব্যক্তি মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ লাখ। আগামী পাঁচ বছরে এ সংখ্যা আরও অনেক গুণ বাড়বে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক বিষয় কীভাবে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যত দ্রুত সম্ভব সে উপায় বের করা উচিত।

0 Comments:

Post a Comment

<< Home