kawsar

Sunday, October 07, 2012

টেলিকম মন্ত্রণালয় ভ্যাস নীতিমালা চায় না!

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক
শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যাচ্ছে ভ্যালুঅ্যাডেড সার্ভিস (ভ্যাস) নিয়ে করা বিটিআরসি'র খসড়া নীতিমালা। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে জানিয়েছে আপাতত ভ্যাসের কোন প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রে পাঁচটি কারণ দেখিয়েছে মন্ত্রণালয়।
টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাফিউল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ও বাজার পৃথক ভ্যাস লাইসেন্সের উপযুক্ত নয়। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভ্যাসের মার্কেট এবং ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এরপর বলা হয়েছে, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসহ সব পক্ষের অধিকার ও প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুফল নিশ্চিত করতে সব পক্ষের প্রাপ্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, নতুন প্রযুক্তির প্রচলনসহ কর্মসংস্থান ও অন্যান্য বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা যেতে পারে। শেষে বলা হয়েছে নতুন করে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে কমিটির সুপারিশ মতো পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর চিঠি পাঠানো হলেও বিটিআরসিতে তা এসেছে ১৬ সেপ্টেম্বর। বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। ভ্যালুঅ্যাডেড সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আলীম বলেন, তারা এ বিষয়ে বিস্মিত হয়েছেন। এর মাধ্যমে বিদেশি উদ্যোক্তাদের পক্ষই নিল মন্ত্রণালয়। তিনি জানান, ঢাকায় এখন এমন ভ্যাস অপারেটর আছে যারা মাসে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার রেমিট্যান্স অবৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছে। এই ব্যবসাটি দেশীয়দের দেয়া হলে এই টাকা তারা দেশের মধ্যে ধরে রাখতে পারতেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ভ্যাস বিষয়ে সরকারের এই অবস্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেসিস সভাপতি একেএম ফাহিম মাশারুর। তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের এই খাতটিতে আরও বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে চেয়েছিল প্রস্তাবিত নীতিমালায়। সেই পথ বন্ধ করে দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো আলোচনার মাধ্যমে এটা সমাধান করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিটিআরসি খসড়া নীতিমালায় বলেছিল, মোবাইল ফোন অপারেটররা ভ্যাসের নিজস্ব কোন আয়োজন করতে পারবে না। আর এর পুরো নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতের বাইরে থাকবে। অপারেটররা কেবল তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবহারের জন্য কিছু ভাড়া পাবে।

মোবাইলে অপরাধ দমনে বিটিআরসির পদক্ষেপ

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক
প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম বিক্রি বন্ধের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ভিত্তিক অপরাধ দমনে পদক্ষেপ নিয়েছে বিটিআরসি। মোবাইল ফোনে অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নানামুখী সমস্যার প্রেক্ষাপটে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি, হয়রানি, প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এছাড়া অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিভিন্ন জনের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চেয়েও হুমকি দিয়ে থাকে।
বিটিআরসি কর্মকর্তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যদের এ ধরনের ফোন দাতাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হয়। কারণ তারা সাধারণত অনিবন্ধিত সিম ব্যবহার করে, প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিমের সহজলভ্যতার সুযোগ নেয় কিংবা সিম নিবন্ধন করার সময় ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে থাকে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আগামী ১২ অক্টোবর থেকে মোবাইল ফোনের জন্য প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম কার্ড বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটরা যাচাই-বাছাইয়ে ক্রেতার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলেই কেবল বিক্রীত সিমটি ব্যবহারের উপযোগী (অ্যাক্টিভেট) করতে পারবে। বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'এ সিদ্ধান্ত আগামী ১২ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।' তিনি বলেন, 'কমিশন অপরাধমূলক কর্মকা- প্রতিরোধে অনিবন্ধিত সিম কার্ড বিক্রি ও অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস অভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসা বন্ধে বদ্ধপরিকর।' বিটিআরসি ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপর এক নির্দেশনায় বিটিআরসি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজার থেকে প্রি-অ্যাক্টিভেটেড সিম তুলে নিতে অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে। বিটিআরসি জানায়, সিম নিবন্ধনের সময় ক্রেতাদের নাম-ঠিকানাসহ তথ্যে ভুলভ্রান্তি থাকলে এর দায়ভার অপারেটরদের ওপর বর্তাবে।
মোবাইল ফোন অপারেটররা অবশ্য দাবি করেছে, সিম কার্ড ক্রেতাদের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করার মতো লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় তাদের জন্য বিটিআরসির নির্দেশনা মানা সহজ হবে না। তবে বিটিআরসি কর্মকর্তারা এ যুক্তি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, অপারেটরা তাদের বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বা প্রতিবেশী দেশের সিম অ্যাক্টিভেশন প্রক্রিয়া অনুযায়ী সহজে এ কাজটি করতে পারে। তারা বলেন, অপারেটরা ক্রেতাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে তাদের ছবি, পরিচয়পত্র, জন্ম সনদপত্রসহ অন্তত যেকোন একটি তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে। কর্মকর্তারা জানান, নতুন সিম কার্ড কিনতে এক কপি ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপির পাশাপাশি টেলিকম কানেক্টিভিটি ফরম পূরণ করা ক্রেতাদের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে অনেক অপারেটররা এটা মানছে না।
বিটিআরসি কর্মকর্তারা বলেন, 'ক্রেতাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর সিম কার্ড সক্রিয় করতে ৭২ ঘণ্টা সময় নিতে অপারেটরদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।' নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোবাইল অপারেটররা বিটিআরসির এ আদেশ অমান্য করলে প্রতি ঘটনার জন্য তাদের ৫০ মার্কিন ডলার জরিমানা দিতে হবে।
এদিকে গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিত করার দায়িত্ব নেবে না মোবাইল ফোন অপারেটররা। গত ১ অক্টোবর অপারেটররা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গ্রাহকের পরিচয় সঠিক কিনা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তারা নিতে পারেন না। তারা বলছে, ১২ অক্টোবর থেকে মোবাইল ফোনের প্রি-অ্যাকটিভ (আগে থেকে চালু) সিম বিক্রি বন্ধ করার বিষয়টি তারা মেনে নিচ্ছেন। কিন্তু তাই বলে গ্রাহক ভুল তথ্যের পরিচয়পত্র দিলে তা নিশ্চিত করতে তারা পারবেন না।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভুল তথ্যে সিম নিবন্ধনের দায় অপারেটরকে নিতে হবে। নিয়ম ভঙ্গ হলে আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি বলেন, কোন অবস্থায় এই দায়িত্ব বিটিআরসির ওপর আসতে পারে না।

থ্রিজির প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গেও ফ্লোর প্রাইস দেড়শ' কোটি টাকা

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিবেদক
থ্রিজির তরঙ্গের নিলামে প্রতি মেগাহার্টজের ফ্লোর প্রাইস ধরা হচ্ছে দেড়শ' কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার (প্রায় ১.৮ কোটি মার্কিন ডলার)। এর আগে খসড়া নীতিমালায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গেও ফ্লোরপ্রাইস ৩ কোটি ডলার ধরার প্রস্তাব করেছিল।
সমপ্রতি থ্রিজি নীতিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ শুরু করেছে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এ মাসেই এটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন টেলিযোগাযোগ সচিব সুনীল কান্তি বোস, যিনি আবার খুব তাড়াতাড়িই বিটিআরসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন তিনি। তার আগে থ্রিজির নীতিমালা চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু করে দেবেন তিনি। এ জন্য আগামী ৭ অক্টোবর বিটিআরসির সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা তৈরি করতে গিয়ে এর যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে তা নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা করতে চায় মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এ বিষয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের দেয়া প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করছে মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তা। সব প্রক্রিয়া শেষ করে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহেই তা অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠান হবে।
এর আগে গত ২৮ মার্চ বিটিআরসি থ্রিজি নীতিমালার একটি খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। খসড়া ওই নীতিমালায় বিটিআরসি টেলিটকসহ পাঁচটি অপারেটরকে থ্রিজি সেবা দেয়ার কথা বলে। এর মধ্যে আবার একটি নতুন অপারেটর রাখতে বলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে এখানে খানিকটা ভিন্নমত করছে মন্ত্রণালয়। তারা বলছেন, একটি নতুন অপারেটর আসতে পারে। কিন্তু নতুন অপারেটরের জন্য একটি জায়গা রেখে দেয়া হবে এমনটি করা ঠিক হবে না। যদি নতুন অপারেটরের চেয়ে বিদ্যমানদের মধ্য থেকে নিলামে বেশি টাকা আসে সেটিই বরং বেশি ভালো হতে পারে। সে কারণে এই জায়গায় খানিকটা শীথিলতা আনতে চায় মন্ত্রণালয়।
যে সব কর্মকর্তারা থ্রিজির নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে তাদের একজন জানিয়েছেন, টুজির লাইসেন্স নবায়নের তরঙ্গের মূল্য যেহেতু দেড়শ' কোটি টাকা ধরা হয়েছিল থ্রিজির নিলামের ফ্লোর প্রাইসেও সেটি রাখা যায়। ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশি টাকা আনতে গিয়ে আবার যাতে উল্টো সরকারের টাকা পাওয়ার পথ বন্ধ না হয়ে যায় সেদিকেও তাদের খেয়াল রাখতে হচ্ছে।
আবার খসড়া নীতিমালায় প্রতি অপারেটরের জন্য দশ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ রাখতে বলা হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তারা শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে নাকি মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে আরও কিছুদিন লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
বিনিয়োগের অর্থ সব ডলারে আনতে হবে। খসড়া নীতিমালায় এমন শর্ত দেয়া আছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় মনে করে থ্রিজির নিয়োগের পুরো অর্থ ডলারে আনতে বলা যুক্তিযুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে কেবল তরঙ্গ কেনা এবং লাইসেন্স ফির অর্থই ডলারে (সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ) হিসেবে আনাতে বলা যেতে পারে। তবে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার পরেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় এমনকি সরকার প্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে আরও কিছু পরিবর্তন হতে পারে। তাছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করবে মন্ত্রণালয়। ফলে সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ থাকছেই।

সোশ্যাল গুড সামিটের বাংলাদেশ পর্ব অনুষ্ঠিত

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
গত ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের তিন দিনব্যাপী 'সোশ্যাল গুড সামিট' নামের সম্মেলনটির সমাপনী পর্বটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত 'সোশ্যাল গুড সামিট' সম্মেলনটি শুরু হয়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে।
২৪ সেপ্টেম্বর সোমবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে যৌথভাবে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন কর্মসূচি (এটুআই)।
সোশ্যাল গুড সামিটের বাংলাদেশ পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকেই তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের মঙ্গল করতে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। বর্তমান সরকার দারিদ্র্য হ্রাস এবং গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সামাজিক গণমাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যার সমাধানে নিউ মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপায় এবং প্রযুক্তির প্রসার ঘটানোর পাশাপাশি তা ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান প্রিজনার। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হতে হবে মানুষের মঙ্গলের জন্য, মানুষের কাছে পেঁৗছানোর জন্য। তিনি বলেন, সমাজের প্রান্তিক মানুষের কাছে পেঁৗছানোর জন্য ও তাদের অধিকার রক্ষায় প্রযুক্তির সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।' উদাহরণ হিসেবে তিনি এটুআই কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত ই-পুর্জির কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন ই-পুর্জির মাধ্যমে চিনি পরিশোধনকারীরা কোনরকম মধ্যস্বত্বভোগীদের সহায়তা ছাড়াই আখ সংগ্রহের জন্য কৃষকদের সরাসরি এসএমএস পাঠাতে পারে এবং আখ সংগ্রহ করতে পারে।
'এটুআই' প্রকল্পের পলিসি এডভাইজার আনীর চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে এখন ৪ হাজার ৫৪৫টি উপজেলায় তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদগুলো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সুবিধার আওতায় এসেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছে। নিউ মিডিয়ার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফেসবুককে জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে উল্লেখ করেন। যে দেশে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষের আনাগোনা। তিনি বলেন, জনসংখ্যার দিক থেকে চীন, ভারতের পরেই ফেসবুকের অবস্থান। বাংলাদেশ আউটসোর্সিংয়ের দিক দিয়ে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বলে তিনি তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক কবীর বিন আনোয়ার।
সম্মেলনটির ঢাকায় আয়োজিত বাংলাদেশ পর্বের অনুষ্ঠানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে সামাজিক উন্নয়নের বাধাগুলো দূর করতে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তা ও মত প্রকাশের পাশাপাশি সমাজের প্রগতি ও স্থিতিশীলতার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা সম্পর্কে তাদের মতামত জানিয়েছেন।
সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করতে নতুন প্রযুক্তি ও গণমাধ্যম কি ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে সোশ্যাল গুড সামিটের ঢাকা পর্বের এ আয়োজনে সে প্রসঙ্গে মতবিনিময় করার সুযোগ পেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মসহ তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ ক্ষেত্রের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রতিনিধিরা।
তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক সেবা, ই-গভর্নেন্স, সোশ্যাল মিডিয়া ও নিউ মিডিয়া নিয়ে যারা এদেশে কাজ করছেন তাদের প্রায় ২০০ জন প্রতিনিধি এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজ, সরকার, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, উদ্যোক্তা, প্রযুক্তিবিদ ছাড়াও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলা প্রশাসকরা অংশ নেন। ঢাকার এ অধিবেশনে বাংলাদেশে অনলাইন ও নিউ মিডিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, সরকারি কাজ ও উন্নয়নে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার, স্থানীয় ও জাতীয় সমস্যার সমাধানে নিউ মিডিয়া ও প্রযুক্তিকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করার উপায় এবং এর মাধ্যমে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বাধাগুলো দূর করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে 'সোস্যাল গুড সামিট ২০১২' শীর্ষক সম্মেলনে বক্তারা বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে দ্রুতগতির ইন্টারনেট। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এরিকসনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও প্রেসিডেন্ট হান্স ভেস্টবার্গ এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামাদোন তোরে। এতে ব্রডব্যান্ডের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়।
প্রযুক্তিবিষয়ক খবরের সাইট ম্যাশেবলের প্রধান সম্পাদক ল্যান্স উলানফ আলোচনায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আগের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ভেস্টবার্গ। তার ভাষায়, এখন বিশ্বে ৬৩ লাখ ব্যক্তি মোবাইল ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ লাখ। আগামী পাঁচ বছরে এ সংখ্যা আরও অনেক গুণ বাড়বে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্যান্য মৌলিক বিষয় কীভাবে প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যত দ্রুত সম্ভব সে উপায় বের করা উচিত।

মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যায় ব্যবহারকারীরা

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
মোবাইল ফোনে কলড্রপ ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। দফায় দফায় চেষ্টা করেও সংযোগ মেলে না। একটি সংযোগ পেতে কয়েকবার শুনতে হয়, 'দ্য মোবাইল ক্যান নট বি রিচড অ্যাট দিস মোমেন্ট'। মোবাইল স্ক্রিনে নেটওয়ার্ক এররও দেখায় অনেক সময়। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিক এ ধরনের সমস্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সিনিয়র এমপিদের পাশাপাশি স্পিকার নিজেও নেটওয়ার্ক বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একই অপারেটরের দুই গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগে সমস্যা যতটা, ভিন্ন অপারেটরের ক্ষেত্রে তা অনেক বেশি। আবার মোবাইল ফোন থেকে ল্যান্ডফোনে সংযোগ পেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহককে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিশ্চিতকরণের কাজ শুরু করেও থেমে গেছে। এ অবস্থায় তাদের বক্তব্যও গ্রাহকদের খুব বেশি আশ্বস্ত করতে পারছে না।
মোবাইল ফোন অপারেটররা যে যার নেটওয়ার্ক সেরা বলে দাবি করছে। এক্ষেত্রে ছোট অপারেটররা বলছে, সমস্যা মূলত বেশি গ্রাহকের অপারেটরগুলোয়। ক্ষমতার চেয়েও বেশি গ্রাহকের কারণে নেটওয়ার্ক বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকে, ফলে গ্রাহক সংযোগ পান না বা সংযোগ পেলেও অহরহ কলড্রপ হয়। বড় অপারেটর বলছে, নেটওয়ার্কের বিবেচনায় গত ১৫ বছরে সেরা অবস্থানে আছে তারা। একাধিক গ্রাহক বিভিন্ন অপারেটরের নাম উল্লেখ করেই সরাসরি অভিযোগ করেন। তারা বলেন, অপারেটররা গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
এর আগে ঢাকার বাইরে সমস্যা হলেও এখন ঢাকায় সমস্যা বেড়েছে। প্রায় প্রতিটি অপারেটরেরই এখন রাজধানীতে অসংখ্য পকেট তৈরি হয়েছে, যেখানে মোবাইল সিগন্যাল অত্যন্ত দুর্বল থাকে। অনেক ক্ষেত্রে উঁচু ভবনের ওপরের দিকে বা ভবনের পাদদেশেও নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। অপারেটরগুলো নেটওয়ার্ক দুর্বলতার জন্য গরম এবং বৃষ্টিকে সমানভাবে দায়ী করায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
গ্রামীণফোনের সার্ভিস অপারেশন সেন্টারের ম্যানেজার মনোয়ার শিকদার বলেন, শীতকালে নেটওয়ার্ক অন্য সময়ের তুলনায় ভালো থাকে। গরম বাড়লে বা বৃষ্টিতেও অনেক ক্ষেত্রে রেডিও নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, সামান্য বাতাসেও অনেক সময় রেডিও নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়। তখন গ্রাহক দুর্বল সংযোগ পান। মনোয়ার শিকদার অবশ্য দাবি করেন, সার্ভিস লেভেলের সবর্োচ্চ সেবা দিচ্ছে গ্রামীণফোন।
দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নেটওয়ার্ক সোয়াপের (প্রতিস্থাপন) কাজ করছে ৪ কোটি গ্রাহকের অপারেটর গ্রামীণফোন। সোয়াপের শুর থেকে তাদের নেটওয়ার্কে যে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে তা শেষ হয়নি। অবশ্য সোয়াপের কাজ শেষে সবুজ বাতির সংকেত সংবলিত বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। গ্রামীণফোন দাবি করছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তাদের নেটওয়ার্কই এখন সবচেয়ে ভালো। এরপরও রাজধানীতে গ্রামীণফোনের কয়েকটি বস্ন্যাক স্পট এবং দুর্বল নেটওয়ার্কের পকেট থাকার কথা স্বীকার করেন মনোয়ার। বর্তমানে উত্তরা এবং পুরান ঢাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জানান তিনি।
বর্তমানে উত্তরা এলাকায় সমস্যা বেশি হচ্ছে বলেও জানান দ্বিতীয় গ্রাহকসেরা অপারেটর বাংলালিংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তা বলেন, উত্তরা এলাকায় একসময় ছয়তলার বেশি উঁচু ভবন ছিল না। নেটওয়ার্ক কাঠামোও তৈরি হয়েছিল সেই বিবেচনায়। এখন অনেক উঁচু ভবন ওই এলাকায় হচ্ছে। ফলে নেটওয়ার্ক পেতে সমস্যা হচ্ছে।
গ্রাহকদের বক্তব্য অনুসারে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক সমস্যা হচ্ছে নতুন অপারেটর এয়ারটেলে। কম কল রেটের কারণে অনেক নতুন গ্রাহক এ অপারেটরের দিকে ঝুঁকলেও নেটওয়ার্ক সমস্যা তাদের ভোগাচ্ছে।
এ বিষয়ে তাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। একজন অবশ্য বলেন, আবহাওয়ার তারতম্যই বড় সমস্যা করছে। অন্য একজন বলেন, নিজেরা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনার কাজ না করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কাজ করাতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত অপারেটর টেলিটককে নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমানের দাবি, টেলিটকের জন্মের পর থেকে এখনকার নেটওয়ার্কই সবচেয়ে শক্তিশালী। আগে খাপছাড়াভাবে ইচ্ছামতো বিটিএস বসানো হলেও এখন পরিকল্পনামাফিক কাজ করা হচ্ছে। গত তিন বছরে ঢাকায় নতুন ১৫০ বিটিএস বসেছে। সবমিলিয়ে ঢাকাতেই বিটিএস ৪০০ পেরিয়ে গেছে বলে জানান তিনি। মুজিবুর রহমান বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীতে আরও প্রায় ১৫০ বিটিএস যোগ হবে। এ ছাড়া ঢাকায় এখন যেসব পকেটে সমস্যা রয়েছে বা যেখানে বিভিন্ন উৎসবে লোকসমাগম বেশি হয় সেখানকার শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
অন্যদিকে রবির নেটওয়ার্ক নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের তালিকা থেকে বাদ পড়েনি সিটিসেলও। নেটওয়ার্ক বিষয়ে সিটিসেলের শীর্ষ পর্যায়ের বক্তব্য হলো, যতটুকু এলাকায় নেটওয়ার্ক আছে সেটুকুতে সবর্োচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করা। রবির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার একেএম মোরশেদসহ তাদের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্রাহক যেন সেরা সেবা পান সে জন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছে। এ সংক্রান্ত কিছু কাজ এগোলেও পুরোটা বাস্তবায়ন শেষ হয়নি বলেও জানান তিনি। মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি কার্যকর হলে আগের নম্বর ঠিক রেখেই গ্রাহক যখন-তখন বাজে নেটওয়ার্ক ছেড়ে ভালো নেটওয়ার্কের অপারেটরে যেতে পারবেন। তখন নেটওয়ার্কের প্রতি অপারেটররা আরও মনোযোগী হবে বলে দাবি করেন তিনি।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান থাকাকালীন জিয়া আহমেদের কার্যক্রম

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) জিয়া আহমেদ (৫৮) গত ১০ সেপ্টেম্বর সোমবার ভোর ৩টা ৩০ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেছেন।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যান পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান জিয়া আহমেদ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আরও এক বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে থাকা জিয়া আহমেদকে অবসরে পাঠানো হলেও ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাকে বাহিনীতে ফিরিয়ে মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়।
তিনি ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন প্রাপ্ত হন। তিনি সিগন্যাল কোরে একজন চৌকস ও দক্ষ অফিসার হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীতে সিগন্যাল ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে কমান্ডেন্টসহ সিগন্যাল স্কুলে প্রধান প্রশিক্ষক ও অন্য পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মোজাম্বিকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে চিফ মিলিটারি পার্সোনাল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান হিসেবে সাড়ে তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালন করা জিয়া আহমেদের কিছু কার্যক্রম এখানে তুলে ধরা হলো :
১. আইটিইউর কাউন্সিলর : প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে বিজয় পায় বাংলাদেশ। ২০১০ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৫৮ দেশের মধ্যে ১২৩ দেশের সমর্থন পেয়ে ৬ষ্ঠ স্থান পায় বাংলাদেশ। নির্বাচনে প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা পরাজিত হয়েছে বড় ব্যবধানে। এ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল বিটিআরসি।
২. টুজি লাইসেন্স নবায়ন : গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি এবং সিটিসেলের দ্বিতীয় প্রজন্মের (টুজি) লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন জিয়া আহমেদ। লাইসেন্স নবায়নের নীতিমালা তৈরি করা থেকে শুরু হয় এর কাজ। পরে আগামী ১৫ বছরের জন্যে এ চার অপারেটরকে দেয়া হয়েছে লাইসেন্স। গত ৭ আগস্ট চার অপারেটরের কাছে হস্তান্তর করা হয় এ লাইসেন্স।
৩. সবচে বেশি রাজস্ব আয় : তার আমলেই বিটিআরসি সবেচেয়ে বেশি পরিমাণ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয়। তিনি ঐকান্তিকভাবে চেষ্টা করেছিলেন, সরকারের রেভিনিউ যেন কোন অবস্থাতেই কমে না যায়। তিনি তরঙ্গ মূল্যের পরিমাণ যা ঠিক করেছিলেন, সেটা হয়নি বলে তিনি মন খারাপ করতেন। বলতেন, দেশের কোষাগারে আরও বেশি টাকা জমা হতো। কিন্তু বিভিন্ন লবি গ্রুপের কারণে সেই পরিমাণ ফি তিনি রাখতে পারেননি।
৪. স্পেকট্রাম পুনর্বিন্যাস : দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের অন্যতম সেরা সিদ্ধান্ত ছিল এটি। গত ৩ মে রাত ১২টার পর মোবাইল ফোন অপারেটরদের ১৮০০ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম পুনর্বিন্যাস করে বিটিআরসি। এ পুনর্বিন্যাসের ফলে বিটিআরসি ১৫ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বের করে আনতে পেরেছে। যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। বিটিআরসি এ স্পেকট্রাম প্রয়োজনে অন্য কোন অপারেটরের কাছে বিক্রি করতে পারবে।
আগে ১৮০০ ব্যান্ডে গ্রামীণফোনের ১৪ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম ছিল তিন জায়গায়। এখন এ পরিমাণ স্পেকট্রাম এক জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে। একইভাবে রবিও তিনটি ভিন্ন স্থানে গ্রামীণফোনের সমপরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে আবার বাংলালিংক চারটি জায়গা থেকে কিছু কিছু মিলিয়ে ১২ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ব্যবহার করত। এখন এগুলো সব একত্রিত করা হচ্ছে। ফলে গার্ড ব্যান্ড কমে গেছে। তাতে করে বাড়তি তরঙ্গ পাওয়া গেছে।
৫. অপারেটরদের অডিট : যদিও গ্রামীণফোনের অডিট কার্যক্রম নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে, কিন্তু তারপরও এটি ঠিক যে আইনের থাকলেও গত দশ বছরে বিটিআরসি একবারের জন্যেও এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। জিয়া আহমেদ এ বিষয়ে কার্যক্রম হাতে নেন। এখানে সরকারের রিভিনিউ শেয়ারিং রয়েছে। তাই প্রতি অর্থবছরেই সেটা অডিট করাটা জরুরি। কিন্তু সেই কাজটি জিয়া আহমেদ এসে শুরু করেছিলেন এবং তিনি জোর দিয়ে বলতেন, গ্রামীণফোনের অডিট নিয়ে যে মামলা আছে, তাতে তিনি জিতবেন। এখন বাংলালিংক, রবি এবং সিটিসেলে অডিটের প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে।
৬. দশ সেকেন্ডের পালস : যদিও টেলিটক ছাড়া আর কেউ এখনও এটি কার্যকর করেনি। কিন্তু তারপরও এক্ষেত্রে তিনি অনেক দূর এগিয়েছিলেন। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মোবাইল ফোন অপারেটরের এটি কার্যকর করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তিনি জানিয়ে ছিলেন, দশ সেকেন্ডের পালস কার্যকর করা গেলে এরপর প্রতি সেকেন্ডের পালসও তিনি কার্যকর করার ব্যবস্থা করবেন।
৭. থ্রিজি লাইসেন্স : তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে গত ২৭ মার্চ তা টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এখনও সে বিষয়ে কোন মতামত জানায়নি। জিয়া আহমেদের করা নীতিমালায় বিদ্যমান অপারেটরগুলোর বাইরে আরও একটি নতুন অপারেটরকে সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
৮. ফেসবুকে প্রচারণা : জিয়া আহমেদের সর্বশেষ কার্যক্রমগুলোর একটি ফেসবুক প্রচারণা। গত সপ্তাহে বিটিআরসি দেশের প্রথম কোন সংস্থা হিসেবে ফেসবুকে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিটিআরসির জন্য নতুন ফেসবুক পেজ খোলা হয়। ফেসবুকে তারা তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত জানানোর পর সেখান থেকে জনগণের ফিডব্যাকও নিতে শুরু করে।
৯. সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল : অন্য দেশে থাকলেও বাংলাদেশে এ বিষয়ে আগে কেউ কখনও কিছু জানত না। জিয়া আহমেদ চারটি অপারেটরের লাইসেন্স নবায়নের সময় প্রথম এ বিষয়টি যুক্ত করেন। যেখানে বলা হয় অপারেটররা তাদের আয়ের এক শতাংশ এ তহবিলে দেবে। পরে তথ্যপ্রযুক্তিসহ সংশ্লিষ্ট খাতের উন্নয়নের জন্যেই তা খরচ করবে সরকার। ইতোমধ্যে এ খাতের টাকা জমা পড়তে শুরু করেছে। তবে টাকা খরচের বিষয়ে তাদের তৈরি করা নীতিমালা এখনও অনুমোদন করেনি টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।
১০. ভাস অপারেটর সৃষ্টির উদ্যোগ : দেশীয় অপারেটরদের মোবাইলের ভ্যালু অ্যাডেড সেবায় নিয়ে আসার জন্যে এ বছরই প্রথম বিটিআরসি উদ্যোগ নেয়। তিনি মনে করতেন, ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের মাধ্যমে দেশে নতুন ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং মোবাইল ফোন অপারেটররা পৃথিবীর অন্য দেশের মতো ভাস সেবা উন্মুক্ত রাখবে, যেন যে কেউ এ কানেক্টিভিটি ব্যবহার করে নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসতে পারে। সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও তৈরি করে তারা। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেটিও এখনও অনুমোদন করেনি।
১১. বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট স্থাপনের উদ্যোগ : দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছিল বিটিআরসি। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সমন্বিত চিঠি গত ৬ সেপ্টেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য এরই মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছে কক্ষেপথের ১০২ ডিগ্রি পূর্বে সস্নট চেয়েছে বিটিআরসি। চলতি বছরের ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনালের (এসপিআই) সঙ্গে চুক্তিও করেছে বিটিআরসি।

মোবাইল পুশ সেল গ্রাহকরা অতিষ্ঠ

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
অযাচিতভাবে গ্রাহককে ওয়েলকাম টিউন, গান বা অন্যান্য ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস গছিয়ে দেয়া হচ্ছে। কখনও কখনও একটি অফার ফ্রি দিয়ে দুই সপ্তাহ পর কিছু না জানিয়ে সেবাটি গ্রাহকদের জন্য চালু করে দেয়ার ঘটনা খুবই নিয়মিত। সবচেয়ে মুশকিলের কথা হলো, একবার একটি সেবা গছাতে পারলে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসার সুযোগই পাচ্ছেন না গ্রাহক। নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি এটিকে বলছে মোবাইলের পুশ সেল। এ পুশ সেলের মাধ্যমে মাসে গ্রাহকদের অন্তত দেড় থেকে দুইশ' কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে দাবি বিটিআরসির।
আবার পুশ সেল বিষয়ে নানা নির্দেশনা দেয়া হলেও সেগুলো অনেক অপারেটর আমলে নেয়নি বলে জানা গেছে। তারা বলছে, গ্রাহকদের সঙ্গে এমন প্রতারণা সহ্য করা হবে না। সেক্ষেত্রে প্রথম দফায় অপারেটর ধরে ধরে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হচ্ছে। এরপর জরিমানাও করা হবে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসির এক শীর্ষ কর্মকর্তা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গ্রাহকদের সচেতন করতে নানা প্রচারসহ ফেসবুকে অভিযোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক জানান, একবার না বুঝে রাশিফল জানার চেষ্টা করে তিনি এমন বিপদে পড়েছেন যে, সেখান থেকে আর বেরোতেই পারেননি।
আড়াই বছর ধরে প্রতিদিন সকালে তার আড়াই টাকা করে কাটা যাচ্ছে। দফায় দফায় অভিযোগ করেও সমস্যার কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ইন্দিরা রোডের নিশি হঠাৎ করেই তার মোবাইল ফোনে চার ডিজিটের একটি নম্বর থেকে ফোন পান। ও প্রান্ত থেকে নিশিকে গান ডাউনলোড করার অনুরোধ জানানো হয়। পরপর তিনদিন ফোন করার পর একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে নিশি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন; কিন্তু তাতেও দমে যান না তারা। সময়ে-অসময়ে ফোন আসতেই থাকে। মাঝে মাঝে এসএমএসও আসে। এ বিষয়ে বিটিআরসি বলছে, বিশ্বের কোথাও এভাবে গ্রাহককে বিরক্ত করে কোন পণ্য বিক্রি করার রেওয়াজ নেই।
একজন গ্রাহক একটি মোবাইল সেট জিততে এক মাসে ১০ হাজার টাকার এসএমএস করেছেন। পুরস্কার পাওয়া হয়নি তার। এমনকি তিনি জানতেও পারেননি প্রতিযোগিতায় তার অবস্থান কততম। প্রথম যে ১০ জন পুরস্কার জিতেছেন তারাই বা কত এসএমএস করে জিতলেন মোবাইল সেটগুলো, সেটিও জানতে পারেননি তিনি।
বিটিআরসি বলছে, পুশ সেলের মাধ্যমে অপারেটরগুলো গ্রাহককে বিভিন্ন ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস কিনতে বাধ্য করে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে তারা গ্রাহককে এটি কিনতে বাধ্য করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রে সময়ে-অসময়ে ফোন করে বা এসএমএস পাঠিয়েও গ্রাহককে বিরক্ত করে। এ বিষয়ে তাদের কাছে অনেক অভিযোগও এসেছে।
এসব বিষয়ে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, কমিশন অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের নিরাপত্তার ছাতা হিসেবে কাজ করে। কয়েকটি অপারেটর তো বেশি কথা বলার বিনিময়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট উপহার দেয়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এভাবে মাত্র কয়েকটি হ্যান্ডসেট উপহার হিসেবে দিয়ে হাজার হাজার লোককে অত্যধিক কথা বলতে উৎসাহী করছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অপারেটররা এখন সবচেয়ে বেশি গ্রাহক ঠকাচ্ছে ব্যান্ডউইথ বিক্রির মাধ্যমে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আশফিয়া করিম জানান, ৩২০ টাকা দিয়ে এক গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ কেনার পর সামান্য কিছু কাজ করেছেন তিনি। পরে দেখেন আর কোন টাকাই অবশিষ্ট নেই। তবে মোবাইল ফোন অপারেটররা জানিয়েছেন, এক মাসের বান্ডেল কোন গ্রাহক নিলে এরপর তার আর কোন ব্যান্ডউইথ থাকারও কথা নয়। তবে বিটিআরসি বলছে, মোবাইল ফোনের অব্যবহৃত টাকা যদি থেকে যেতে পারে তাহলে অবশ্যই ব্যান্ডউইথের টাকাও থাকতে হবে। এটি কেটে নেয়া যাবে না।
একইভাবে কৌতুক শোনা, মোবাইলে নতুন গান শোনা ও সুন্দর ওয়ালপেপার দেখানোর জন্য হরহামেশাই মোটা টাকা কেটে নিচ্ছে অপারেটররা। এক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, একটি অপারেটর কারিনা-সাইফের হট ভিডিও দেখানোর এসএমএস পাঠাচ্ছে। গ্রাহক বুঝে না বুঝে ইয়েসে ক্লিক করলেই তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ টাকা কেটে নেয়া হচ্ছে। এভাবে গ্রাহক ঠকানো বন্ধ করতে বিটিআরসি ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিটিআরসি জানিয়েছে এই পুশ সেলের ব্যাপারে নীতিমালা করতে যাচ্ছে তারা। এ সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালার একটি কপি গণশুনানির জন্য বিটিআরসির ওয়েব সাইটে দেয়া হয়েছে। সেখানে দুটি ই-মেইল ঠিকানা (ৎযধংংধহ@নঃৎপ.মড়া.নফ ও ংঁহলরন@নঃৎপ.মড়া.নফ) দেয়া হয়েছে। যাতে গ্রাহক চাইলে তাদের মতামতও দিতে পারেন। বিটিআরসি জানিয়েছে, গ্রাহকদের মতামত নেয়ার পর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তারা এ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করবে।
বিটিআরসি বলছে, গ্রাহক অপট-ইন বা রেজিস্ট্রেশন করলেই তাকে সেবাটি দেয়া যাবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রচারিত বিজ্ঞাপনে সেবাটি গ্রহণ করার পদ্ধতির পাশাপাশি ডি-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি বা এখান থেকে বেরিয়ে আসার পদ্ধতিও সমান গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করতে হবে। তাছাড়া গ্রাহক যদি ভয়েস এবং এসএমএস-এর বাইরে আর কোন সেবা না চায় তাহলে 'ঝঞঙচ অখখ্থ লিখে সব সার্ভিস থেকে যাতে বেরিয়ে আসতে পারে সেই ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে।
বিটিআরসির প্রাথমিক প্রস্তাবে রয়েছে, কোন সেবা দেয়ার ৭২ ঘণ্টা আগে একবার এবং ২৪ ঘণ্টা আগে আরও একবার নোটিফিকেশন দিতে হবে। প্রিপেইড গ্রাহকদের আউট গোয়িং কলের ক্ষেত্রে প্রতিবার কল শেষ হওয়ার পর কলটির জন্য খরচ হওয়া টাকা-মিনিট এবং গ্রাহকের বর্তমান ব্যালান্স জানাতে হবে। তাছাড়া বর্তমানে একাধিক অপারেটর প্রতি ঘণ্টা/মিনিট/মাসে সর্বোচ্চ কথা বলার জন্যে পুরস্কার দিলেও ভবিষ্যতে এটি করা যাবে না বলে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে। শট কোড বা হেল্পলাইন নম্বর থেকে ফোন করার ক্ষেত্রে গ্রাহককে বিভ্রান্ত করা বা তার সময় ক্ষেপণ করা যাবে না।
বন্ধ সিম চালু করার ক্ষেত্রে অপারেটররা এখন অনেক সুবিধা দিতে চাইছে। এক্ষেত্রে মূল গ্রাহক ছাড়া অন্য কাউকে সিম রিপ্লেসমেন্ট দেয়া যাবে না। বন্ধ সংযোগে বোনাস বা অফার যাতে মূল গ্রাহকই পেতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে অপারেটরকে নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া একটি সিম মাত্র একবারই বিক্রি করা যাবে। তাছাড়া বন্ধ সংযোগ ফিরে পতে চাইলে গ্রাহকের কাছ থেকে নতুন করে সিমের দাম নেয়া যাবে না।
কোন গ্রাহক কল করলে তার রিং ব্যাংক টোন শুরু হওয়ার পূর্বে মোবাইল অপারেটরের নিজস্ব বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতে থাকে। একই সঙ্গে গ্রাহকের মিসড কল অ্যালার্ট চালু থাকলেও সেখানেও বিজ্ঞাপন শুনতে হয়। গ্রাহক কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে সেখানেও বিভিন্ন প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন শুনতে হয়। বিটিআরসি বলছে, এগুলো প্রতারণার শামিল। খসড়া নীতিমালায় তারা বলছেন, এ ধরনের প্রতারণা করা যাবে না।
বিটিআরসি বলছে, ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় গ্রাহকদের। তারা বলছে, ২০০৪ সালে প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ৭২ হাজার টাকা। তখন অপারেটররা প্রতি কিলোবাইট দুই পয়সা হারে বিক্রি করত। আর এখন প্রতি মেগাবাইট ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ৮ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। এখনও গ্রাহককে একই দামে ব্যান্ডউইথ কিনতে হচ্ছে।
পি ওয়ান লিখে ব্যবহার করা এই পদ্ধতির কারণে মাসে গ্রাহকরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানিয়েছে বিটিআরসি। তারা বলছে, এই পি ওয়ান প্যাকেজের মাধ্যমে এক মাসে ২৫ হাজার টাকা বিল ওঠার খবরও তারা পেয়েছেন। গ্রাহককে এভাবে প্রতারিত হতে দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে বিটিআরসি কয়েকটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। পি ওয়ান প্যাকেজের মাধ্যমে মাসে গ্রাহক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ব্যবহার করতে পারবে। ১০০ টাকা পেরিয়ে গেলেই তার প্যাকেজটি অন্য প্রচলিত প্যাকেজে চলে যাবে। তবে পরবর্তী মাসের প্রথম দিন থেকে এটি আগের প্যাকেজে চলে আসবে গ্রাহক।

ভিওআইপির কোটি কোটি টাকা লুট, তদন্তে দুদক

মোহাম্মদ কাওছার উদ্দীন
আন্তর্জাতিক কল রেকর্ড রাখতে কারিগরি সীমাবদ্ধতা এবং লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর দীর্ঘ দিনেও বিটিসিএল আইসিএক্স মেশিন না বসানোয় দিন দিন বাড়ছে ভিওআইপির অবৈধ ব্যবহার। এরই মধ্যে মাত্র ৭ মাসে শুধু একটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের মাধ্যমে সরকারের বেহাত হয়েছে ৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
আর এই কাজে মদদ দিচ্ছে সরকারেরই একটি অংশ। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের প্রায় অধিকাংশ মন্ত্রী এবং ডাকসাইটে এমপিদের কাছেই রয়েছে অবৈধ ভিওআইপি কলের এসটিএম লাইন। আর এই লাইনগুলোর বৈধ ব্যবহার নিয়ে কোন নজদারি নেই।
সূত্র মতে, ২০০৮ সাল থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) ও বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) মাধ্যমে শুরু হয় আন্তর্জাতিক কলের গেটওয়ের অবৈধভাবে ব্যবহার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হংকংয়ের ক্যারিয়ারের স্থানীয় আইসিএম গ্রুপের মাধ্যমে দিনের পর দিন হাতছাড়া হচ্ছে সরকারের প্রাপ্ত অর্থ। এছাড়াও ২৮টি ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিটিসিএল ও বিএসসিসিএল চুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট হিসাবের অনিয়ম খতিয়ে দেখছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখে মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক।
সরকারকে ফাঁকি দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ল্যান্ডফোন কোম্পানি বিটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা এই টাকা নিজেদের পকেটে পুরেছেন। ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টিসহ অন্যান্য জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে চুক্তি করে লাভের অংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র। কম্পিউটার থেকে কলরেকর্ড পর্যন্ত মুছে ফেলেন তারা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ই-ওয়ান থেকে এসটিএম লাইনে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল বেড়েছে। সবগুলো ক্যারিয়ারের এক বছরের লুটপাটের হিসাব নিতে পারলে টাকার অঙ্ক কয়েকশ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে অনিয়মের বিষয়টি ঢাকা দেয়ার জন্য বিটিসিএলের কর্মকর্তার নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তথ্য দেয়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে অনেক তথ্যই দিতে চায়নি বিটিসিএল।
উল্লেখ্য, এক দেশ থেকে অন্য দেশে টেলিফোন কল নেয়ার ক্ষেত্রে মাঝখানে কিছু কোম্পানি ক্যারিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বিদেশি এসব ক্যারিয়ারের মাধ্যমেই প্রতিদিন দেশে কোটি কোটি মিনিটের টেলিফোন কল আসে। প্রতি মিনিটের বৈধ কলের জন্য তিন সেন্ট করে দেশে আসার কথা। তবে ভুয়া চুক্তির মাধ্যমে তথ্য মুছে ফেলে টাকার পুরোটাই লুটে নেয়া হচ্ছে অনেক দিন থেকে।
জানা গেছে, হংকং ক্যারিয়ারের মাধ্যমে আইসিএম গ্রুপের নাম ব্যবহার করে তিন কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার ১৯০ কোটি লোপাট হয়েছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭ মাসে তাদের মাধ্যমে কল লেনদেনে বিটিসিএলের এই ক্ষতি হয়।
সংশ্লিষ্ট নথি থেকে প্রকাশ, ২০০৮ সালে আইসিএম গ্রুপের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় সাবিল আইটি লিমিটেড আবেদন করে। তারা নিজেদেরকে আইসিএম গ্রুপ স্থানীয় প্রতিনিধি দাবি করে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তদন্তকালে পায়নি দুদক কর্মকর্তা। এমনকি সাবিল আইটি লিমিটেডের মহাখালি ডিওএইচএস-এর যে ঠিকানা ব্যবহার করেছে সেখানেও এ কোম্পানির ঠিকানা মেলেনি। অপরদিকে চুক্তির আগে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড থেকে দুটি ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করে এই কোম্পনিটি। কিন্তু এর কিছুই ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। বরং যোগসাজশে তাদের সঙ্গে চুক্তি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
নির্দিষ্ট এই ক্যারিয়ারের মাধ্যমে লোপাট হওয়া টাকার দায় বিটিসিএলের তৎকালীন পরিচালক (আন্তর্জাতিক) মাহফুজার রহমানের ওপরেই বর্তায়। ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি এবং ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে চুক্তি করার পর ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর একবার তা বাতিল হয়। পরে আবারও একক প্রচেষ্টায় মাহফুজার রহমান কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি করেন।
দুদকের এক কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে বলছেন, 'নিজে লাভবান হয়ে কিংবা অন্যকে লাভবান করানোর অসৎ উদ্দেশ্যে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে কাজ করে সরকারকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত' করে ওই কর্মকর্তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।' মাহফুজার রহমান বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) হিসেবে কাজ করছেন।
এদিকে দুদক বলছে, সবগুলো ক্যারিয়ার নিয়ে তাদের তদন্ত কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে মামলার উদ্যোগ দেবেন। এর আগে চলতি বছরের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত তদন্তের জন্য চিঠি দিয়ে দুদক থেকে বিটিসিএলের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়। দুদক থেকে বলা হয়, চুক্তিপত্র, ব্যাংক গ্যারান্টি, কার্যাদেশ প্রদানসহ কয়েকটি বিষয় তদন্ত করতে চায় তারা।
আইসিএম গ্রুপ ইনকরপোরেশন ছাড়াও দুদক আরও যে ক্যারিয়ার বিষয়ে তদন্ত করছে সেগুলো হলো_ যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি ক্যারিয়ার অ্যারিস্টোক্রাট সার্ভিস, আই এজ ফোন, ফুসিয়ন, স্ট্রাক হাই, এনটেল। সিঙ্গাপুরের ৬টি ক্যারিয়ার ডিজিটেক, হ্যাক জাপান, আইপাওয়ার, এনটিএস গ্লোবাল, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, সাইন ওয়ার্ল্ড। ইংল্যান্ডের ৯টি ক্যারিয়ার অ্যাকসিফ টেল, রাইয়ান টেল, সিক্সল টেল, বিডিএইউ, জিডিএক্সসি, লাইকা টেল, মনি এন্টারপ্রাইস, টেলিলিংক, ওয়েসিদ্বন নেটওয়ার্ক। কানাডার পাঁচটি ক্যারিয়ার মাই আরবা, ইবসিস, ইকোক্যারিয়ার, প্রাইম টেল ও শ্যাম টেল। এছাড়াও মালয়েশিয়ার দেশি ডিজিটাল এবং অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্ল্ডটেল প্রাইভেট লিমিটেড এর নামে অনিয়ম রয়েছে।
দুদক বলছে, সবগুলো ক্যারিয়ারের সঙ্গে বিটিসিএলের সম্পর্কের বিষয়সহ অন্যান্য সব কিছু তারা তদন্তের আওতায় আনছেন। এর মধ্যে সরকারের কি পরিমাণ টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং এর সঙ্গে কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে তা বেরিয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিটিসিএল এমন সব ভুয়া ক্যারিয়ারের মাধ্যমে কল আনলেও যেহেতু তাদের সিডিআরে (কল ডিটেইল রেকর্ডস) কোন তথ্যই থাকে না সে কারণে শেষ পর্যন্ত লুটপাট ধরা যায় না। তবে এই লোপাটের সঙ্গে সরকারের একেবারে ওপর মহলও জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।